হাতের চামড়া কুঁচকে যাওয়া কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আপনার কি হাতের চামড়া কুঁচকে যায় কেন সে সম্পর্কে জানতে চান? আপনি যদি এই বিষয়ে
জানতে আগ্রহ হন। তাহলে নিচের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কারণ এই
আর্টিকেলটি আপনার সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন দেরি না করে
বিস্তারিত আলোচনা করি।
সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর ত্বক আমাদের আত্মবিশ্বাসের প্রতিক। কিন্তু বয়সের সাথে সাথে হাতের চামড়া কুঁচকে বা ঝুলে যাবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। আমাদের হাত দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত থাকতে হয়। যার কারণে হাতের চামড়া শুষ্ক হয়ে কুঁচকে যায়। হাতের চামড়া কুঁচকে যাওয়া কারণে সৌন্দর্য এবং শরীর স্বাস্থ্য সম্পর্কেও ইঙ্গিত বহন করে।
পেজ সূত্রপত্রঃ হাতের চামড়া কুঁচকে যাওয়া কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
হাতের চামড়া কুঁচকে যাওয়ার প্রধান কারণ
মানব শরীরের সবচেয়ে দৃশ্যমান অংশগুলো মধ্যে হাত অন্যতম। প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে
হাত ব্যবহার করতে হয়, হাত ছাড়া যেকোন কাজ সুন্দর ও সঠিক ভাবে করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এর ফলে হাতের চামড়া সহজেই প্রভাবিত হয়।
যার ফলে অনেক সময় দেখা যায় হাতের চামড়া কুঁচকে যাওয়া অন্যতম উৎস। এই সমস্যার
পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যেমন:
- দীর্ঘক্ষণ পানির সংস্পর্শে থাকা: আপনি যদি দীর্ঘক্ষণ পানি সংস্পর্শে থেকে কাজ করেন, তাহলে আপনার ত্বকের টিস্যুতে পানি প্রবেশ করার কারণে ত্বকের উপরিভাগের সিবাম নামক তৈলাক্ত পদার্থ কমতে থাকে। যার কারণে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে এবং হাতের চামড়া কুঁচকে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
- ঠান্ডা এবং শুষ্ক আবহাওয়া: শীতকালে ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়া কারণে ত্বকের শুষ্কতা বৃদ্ধি পায়। এসময় ঠান্ডা বাতাসে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল কমে যায় এবং শীতকালে গ্লিসারিন বা ময়েশ্চারাইজার জাতীয় ক্রিম ব্যবহার না করলে ত্বক ফেটে বা কুঁচকে যেতে পারে।
- হাতে রাসায়নিক পদার্থ সংস্পর্শে রাখলে: আমরা দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে সাবান, ডিটারজেন্ট ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রায়ই ব্যবহার করি, যার অতিরিক্ত ব্যবহাররে কারণে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল কমে যায় এবং ডিটারজেন্ট বা সাবানে থাকা রাসায়নিক ত্বককে শুষ্ক ও কুঁচকে করে দেয়।
- ভিটামিন ও খনিজের অভাব: অনেক সময় ভিটামিন ও খনিজের অভাবে শরীরের চামড়া কুঁচকে যায়। ভিটামিন ও খনিজের ঘাটটি না থাকলে, ভিটামিন এ - ত্বকের কোষ পুনর্জন্মে সাহায্য করে, ভিটামিন সি - কোলাজেন তৈরিতে সহায়ক করে, ভিটামিন ই - ত্বক নরম ও মসৃণ রাখে, জিঙ্ক - ত্বকের ক্ষত নিরাময় ও নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে। আর এসবের অভাব থাকলে ত্বক শুষ্ক ও কুঁচকে যায়।
- বয়সের প্রভাব: আমাদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকের প্রাকৃতিক তৈল উৎপাদন কমে যায়। যার কারণে শরীরের ত্বক পাতলা হয় এবং চামড়া কুঁচকে পড়ে। বর্তমান আয়ু গড় হিসাবে এই সমস্যা প্রায়ই ৩০ -৩৫ বছর পেরিয়ে আসার পর চোখে পড়ে।
- চর্মরোগ বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা: আপনার শরীরে চর্মরোগ যেমন - একজিমা বা সোরিয়াসিস হাতের চামড়া শুষ্ক ও কুঁচকে যাওয়ার কারণ হতে পারে। তাছাড়া হাইপোথাইরয়েডিজম - হরমোনের সমস্যার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়। এবং ডায়াবেটিস - অতিরিক্ত শর্করা ত্বককে শুষ্ক ও ক্ষীণ করে তোলে।
হাতের চামড়া কুঁচকে যাওয়ার লক্ষণ
মানুষের শরীরের ত্বক আমাদের স্বাস্থ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি। বিশেষ করে হাতের
চামড়া, যেটি সারাদিন বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে বাইরের পরিবেশের সংস্পর্শে আসে। এর
কারণে অনেক সময় দেখা যায় হাতের চামড়া কুঁচকে বা ভাঁজ পড়ে। এটি শুধু সৌন্দর্যগত
পরিবর্তন নয়, বরং স্বাস্থ্যের একটি সর্তক সংকেতও হতে পারে। হাতের ত্বক কেবল শুষ্ক
নয়, আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন -
- ত্বকে ভাঁজ পড়া - অনেক সময় হাতের তালু বা আঙের মাঝে হঠাৎ সূক্ষ ভাঁজ দেখা যায়।
- শুষ্কতা - চামড়া অস্বাভাবিক ভাবে শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়।
- রুক্ষ অনুভূতি - কোন কিছু স্পর্শ করলে হাত রুক্ষ বা শক্ত মনে হয়।
- রঙের পরিবর্তন - অনেক ক্ষেত্রে হাতের চামড়া ফ্যাকাসে বা অস্বাভাবিক কালচে দেখাতে পারে।
- চুলকানি বা জ্বালা পোড়া - চামড়া কুঁচকে যাওয়ার সাথে সাথে হালকা চুলকানি না জ্বালাপোড়া অনুভূতি হয়।
এগুলো শুধু বাহ্যিক লক্ষণ নয়, বরং শরীরে পানিশূন্যতা, ভিটামিনের ঘাটতি, রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা বা বার্ধ্যক্যজনিত পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত হতে পারে।
প্রতিকার ও যত্ন
ত্বকের সমস্যা দূর করতে শুধু প্রতিকার নয়, আপনাকে নিয়মিত যত্নও নিতে হবে। সঠিক
প্রতিকার ত্বকের ক্ষতি দূর করে আর নিয়মিত যত্ন ত্বককে দীর্ঘ সময় সুস্থ, কোমল
সুরক্ষিত রাখে।
- হাইড্রেশন বৃদ্ধি - আপনাকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে এবং হাইড্রেটিং যুক্ত ফুড যেমন শসা, তরমুজ, কমলা বেশি বেশি খেতে হবে।
- ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার - হাত ধোয়ার সাথে সাথে নরম কাপড় দিয়ে মুছে নিন এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ভিটামিন ই ও গ্লিসারিন যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা সবচেয়ে উত্তম।
- ক্ষার মুক্ত সাবান ও কেমিক্যাল ফ্রি হ্যান্ড স্যানিটাইজার - আপনি প্রথমে এমন হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান বেছে নিন ত্বককে শুষ্ক করে না। ক্ষার যুক্ত সাবান ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন।
- সুষম খাদ্য - বেশি বেশি সুষম যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। যেমন - এ, সি, ই ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করুন।
- ত্বক শীতলকরণ - প্রথমে আপনি শরীর শীতল করণের জন্য খুব গরম বা খুব ঠান্ডা পানি ব্যবহার থেকে এড়িয়ে চলুন। এজন্য হালকা গরম সবচেয়ে ভালো, যা শুষ্ক ত্বককে মৃদু রাখতে সহায়ক করে। এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে জীবন যাপন করতে হবে, তাহলে শরীর অনেক সময় পর্যন্ত সুষ্ট রাখতে পারবেন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ - শরীরে একজিমা, সোরিয়াসিস বা ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই আপনাকে প্রথমে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং হাতের ত্বককে সুস্থ রাখার জন্য মেডিকেল হ্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন।
ঘরোয়াভাবে হাতের চামড়া কোমল ও মসৃণ রাখার উপায়
হাতের ত্বক আমাদের দৈনন্দিন কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়, হাত ছাড়া আমাদের চলেই
না। এর কারণে হাতের চামড়া শুষ্ক, রুক্ষ ও খসখসে হয়ে পড়ে। আপনি যদি ঘরোয়াভাবে
হাতের চামড়া কুঁচকে যাওয়া থেকে এবং কোমল ও মসৃণ রাখতে চাই, তাহলে নিচের
নির্দেশানা গুলো ব্যবহার করতে পারেন।
- নারিকেল বা জলপাই তৈল ম্যাসাজ - আপনি রাতে ঘুমানো আগে শরীরে হালকা ম্যাসাজ করুন, তাহলে ঘুমানোর সময় টা শুষ্কতা অনেক টা কমবে।
- মধু ও লেবুর প্যাক - আপনার শুষ্ক ও ফাটল ত্বক কে নরম রাখতে সহায়তা করবে।
- ওটমিল বা দুধের প্যাক - হাতের চামড়া কোমল ও উজ্জ্বল রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- হালক গরম পানি - হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করা সবচেয়ে বেশি উত্তম।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
আমাদের সকলের উচিত শরীর সুষ্ট রাখা ও হাতের চামড়া কুঁচকে যাওয়া থেকে
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সময়মত প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে
সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করা যায়। নিম্নে সে বিষয় গুলো আলোচনা করা হলো:
প্রতিদিন সকাল বেলা ও রাতে ঘুমানো আগে হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এর
ফলে আপনার হাতের চামড়া সুন্দর থাকবে এবং বিভিন্ন ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা
পাবে। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ফলে হাতের ত্বক নরম থাকে কুঁচকে যাওয়া থেকে দূরে
রাখে।
হাতের চামড়া কুঁচকে যাওয়া অন্যতম কারণ হচ্ছে সঠিক ও পরিমান মত সূষম খাদ্য গ্রহণ
না করা। শরীর সুষ্ঠ রাখার জন্য আপনাকে সূষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। এর ফলে শরীরে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সূষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন
সমস্যা দূর করা সম্ভব।
আমরা প্রতিবার হাত ধোয়ার সময় অতিরিক্ত সাবান বা কেমিক্যাল যুক্ত পদার্থ থেকে
দূরে থাকবো। হাতের চামড়া কুঁচকে যাওয়া অন্যতম কারণ হলো অতিরিক্ত সাবান ব্যবহার
করা এর ফলে শরীরের বিচিন্ন সমস্যা দেখা যায়।
আবার ঠান্ডা আবহাওয়া সময় যেন শরীরের সরাসরি ঠান্ডা বাতাস গায়ে না লাগে সে বিষয়ে
বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। ঠান্ডা জনিত কারণে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। এর
পাশাপাশি আপনাকে দৈনিক কম পক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। পর্যাপ্ত
পরিমানে পানি পান করলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়। সুতরাং হাতের চামড়া
কুঁচকে যাওয়া থেকে উপরের প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
সময় মত ডাক্তার দেখানো
মানব জীবনে হাতের চামড়া কুঁচকে যাওয়া কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে,
সমস্যা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আপনার সমস্যা সমাধান ও সুষ্ট ভাবে জীবন যাপনের
জন্য সময় মত ডাক্তার দেখানো দরকার।
যখন দেখবে দীর্ঘ সময় ধরে আপনার ত্বক শুষ্ক বা ফাটা থাকছে ভালো হচ্ছে না তখনি
ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। তা না হলে সমস্যা বিরাট আকার ধারণ করতে পারে।
ময়েশ্চারাইজার করেও ত্বক শুষ্ক থাকছে ভালো হচ্ছে না, তাহলে বুঝতে হবে অন্য কোন
সমস্যা আছে। এই সমস্যা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না।
এছাড়া শরীরে চুলকানি, লালচে ভাব বা ব্যথা অনুভূব করছেন, তাহলে আর দেরি না করে
চর্মবিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এ সমস্যা কে হালকা মনে করে ব্যবস্থা
না নিলে পরবর্তীতে বড় ধরনের সমম্যা দেখা দিতে পারে।
তাছাড়া কারো শরীরের ডায়াবেটিস বা হরমোনের সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে
দেখা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীর কে কোন মতে অবহেলা করা যাবে না
পরবর্তীতে বড় ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
লেখকের শেষ কথা
সম্মানিত পাঠক আশা করছি হাতের চামড়া কুঁচকে যাওয়া কারণ সম্পর্কে জানতে
পেরেছেন। মূলত এটি আপনাদের সুবিধার জন্য আলোচনা করা হয়েছে। যাতে আপনি এ
সমস্যা থেকে সমাধান পেতে পারেন এবং জানতে পারেন। তবে সঠিক খাদ্য, পর্যাপ্ত
পানি, ময়েশ্চারাইজার এবং সঠিক হাতের যত্নের মাধ্যমে হাতের চামড়া মসৃণ, কোমল
এবং সুস্থ রাখা সম্ভব। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য অসংখ্য
ধন্যবাদ।
রাফিকা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url