দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গুরুত্ব
আজকের পৃথিবীতে আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, প্রযুক্তি ছাড়া এক মুহূর্তও কল্পনা করা যেন বড়ই কঠিন। এর মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জীবন, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা এবং সরকারি বেসরকারি সকল কার্যক্রমকে সহজ ও গতিশীল করেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শহর কিংবা গ্রাম সকল মানুষেই এই সুবিধাগুলো ভোগ করছে।
এর কারণে মানুষের জীবন যাত্রা সহজ হয়ে গেছে। ইন্টারনেট, কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন, সফটওয়্যার এবং বিভিন্ন ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে মানুষ দ্রুত যোগাযোগ ও সকল কার্যক্রম সম্পাদন করছে। আধুনিক প্রযুক্তি এই অগ্রগতি কেবল মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করছে না, বরং কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
পেজ সূচিপত্র: দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গুরুত্ব
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) কী?
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) হলো এমন এক আধুনিক প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে আপনি
বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ করে এক স্থান থেকে অন্য
স্থানে দ্রুত পৌঁছাতে পারবেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ডিভাইসগুলো হচ্ছে:
- Computer (Desktop, Laptop, Tablet)
- Smart Phone and Mobile Phone
- Internet Modems, Routers and Web Services
- Printers and Scanners
- Projector and Smart Board
- Television (Smart TV, IPTV)
- Camera (Webcam, Digital Camera, CCTV)
- Audio Device (Microphone, Headphone, Speaker)
- Storage Device ( Pen Drive, Hard Drive, Memory Card, Cloud Storage)
- Satellites and Communication Networks
- Software and Cloud Networks
- Data Analytics and AI Services
চলুন উদাহরণের মাধ্যমে বুঝায়, আপনি অনলাইনে কোন পণ্য অর্ডার করলেন, সেখানে তথ্য
হিসাবে (আপনার নাম ও ঠিকানা) দিলেন, তথ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ডেলিভারি
কোম্পানির সাথে তথ্য আদান-প্রদান করে এবং ডেলিভারি সবকিছুই ICT- এর মাধ্যমে
হয়।
গবেষণার তথ্য: কেন ICT এত গুরুত্বপূর্ণ?
ICT (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) কেন এত গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাতে গবেষণা তথ্যগুলো
বেশ স্পষ্টভাবে প্রমান করে। International Telecommunication Union (ITU) 2024
সালের রিপোর্ট অনুযায়ী:
- সারা বিশ্বে বর্তমানে ৫.৫ বিলিয়ন ইন্টানেট ব্যবহারকারী আছে।
- বৈশ্বিক অর্থনীতির ৭০% এখন সরাসরি ICT এর নির্ভর করে।
- বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৯২% কমপক্ষে একাধিক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
- উন্নয়নশীল দেশে ICT সেক্টর GDP- তে গড়ে ১২-১৫% অবদান রাখছে।
বর্তমানে তথ্য ও প্রযুক্তি আজকের বিশ্বে উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে।
সকল ক্ষেত্রে যেমন- শিক্ষা, স্থাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ এমনকি আমাদের
দৈনন্দিন জীবনের সকল বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব
বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আধুনিক যুগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এর
মাধ্যমে মানুষের দৈনন্দিন সকল কার্যক্রম সহজ করেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
ব্যবহার করে মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে পারছে। সুতরাং দৈনন্দিন জীবনে
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম।
১। যোগাযোগের ক্ষেত্রে:
দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে একস্থান থেকে অন্য
স্থানে দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান করতে পারছে। যেমন:
- Audio/Video calls on mobile phones.
- Social Media (Facebook, whatsApp, Messenger).
- Email and online conferencing meetings, etc.
২। শিক্ষাক্ষেত্রে:
বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস, ই-বুক, ভিডিও লেকচার এবং ডিজিটাল
লাইব্রেরির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহজে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেছে। দৈনন্দিন জীবনে
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গুরুত্ব করোনাকালীন সময়ে এর প্রয়োজনীতা সবচেয়ে অনুভূতি
হয়েছিল। যেমন:
- Online courses and e-learning (Coursera, Udemy).
- Virtual classroom and Zoom/Google Meet. Artificial intelligence based learning methods etc.
- Digital Library and E-Books.
- Artificial intelligence based learning methods etc.
৩। চাকরি ও ব্যবসায়:
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মাধ্যমে ই-কমার্স ওয়েবসাইট, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং
অনলাইন চাকুরির সুযোগ আরও প্রসারিত হচ্ছে। এর ফলে মানুষ দ্রুত ব্যবসার সকল
কার্যক্রম খুব সহজে পরিচালনা করতে পারছে। যেমন:
- E-commerce and online marketplace (Daraz, Amazon).
- Digital marketing and social media advertising campaigns.
- Online payment for anything.
- Data Analytics and Customer Insights.
- Cloud Servers and Cyber Security.
৪। স্বাস্থ্যসেবায়:
স্বাস্থ্য সেবায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গুরুত্ব অপরিসীম। এর মাধ্যমে যেকোন
জাগায় থেকে অনলাইন ডাক্তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য অত
সহজে পাওয়া যায়। যার সর্বসাধারণের জন্য অনেক সুবিধা বয়ে এনেছে। যেমন:
- Telemedicine-remote medical care.
- E-Health Records and Databases.
- AI-based diagnosis.
- Health monitoring through mobile apps, etc.
৫। কৃষিতে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি:
বাংলাদেশের অর্থনীতির এক বড় অংশ আসে কৃষি মাধ্যমে। কৃষির উপর তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি বিশেষ গুরুত্ব রেখেছে। এর মাধ্যমে কৃষকেরা বিভিন্ন তথ্য গ্রহণ করে সে
অনুসারে কৃষি জমিতে ফসল উৎপাদন করতে পারে, এবং বাজারজাত করতে পারে। যেমন:
- Collecting weather information through the use of mobile apps.
- Agricultural advice through online.
- Monitoring crops with drones and sensors.
- Selling agricultural products online, etc.
৬। সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা ও গতি:
অনলাইনে ফরম পূরণ, বিল প্রদান এবং ই-গভর্নমেন্ট সেবার মাধ্যমে মানুষ অতি সহজে
ঘরে বসেই সরকারি সেবা পাচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি সেবায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
গুরুত্ব অনেক। অনলাইন সেবায় সাধারণ মানুষের ক্লান্তি অনেটা দূর হয়েছে।
যেমন:
- Online birth registration and passport application.
- E-tax and online payment.
- Digital Court and E-Governance.
- Citizen Grievance Platform etc.
৭। ব্যক্তিগত জীবনে আরাম ও সাচ্ছন্দ্য বোধ:
তথ্য ও প্রযুক্তি ছোঁয়ায় ব্যক্তিগত জীবনে আরাম ও সাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এর
মাধ্যমে মানুষের জীবনে নেমে এসেছে অবিরাম সুখ ও শান্তি। মানুষের কষ্ট দূর করতে
এবং কাজকর্ম সহজ করতে তথ্য ও প্রযুক্তি গুরুত্ব মুখে বলে শেষ করা যাবে না।
যেমন:
- Using Smart TV and Home Automation.
- Voice assistant ( Alexa, Google Home).
- Online shopping.
- Ride-sharing and delivery apps, etc.
সব মিলিয়ে বলা যায়, দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মানব জীবনের
অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনোদন থেকে
শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এট আমাদের জীবন কে সুন্দর সহজ এবং আধুনিক
করে তুলেছে। তাই আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি ব্যবহার আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে (ICT) প্রভাব
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) আজকের বিশ্বকে একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ সহ প্রায় সবক্ষেত্রে
(ICT) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বৈশ্বিকভাবে (ICT) এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির
প্রধান চালিকাশক্তি। যেমন:
- ICT সেক্টরে বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৫০ কোটিরও বেশি মানুষের জন্য।
- বিশ্ব অর্থনীতির প্রতি ১% ইন্টারনেট প্রবৃদ্ধিতে GDP বৃদ্ধি পায় ১.৪%।
- উন্নয়শীল দেশে ই-গভর্নেন্স সেবা নাগরিক সন্তুষ্টি ৭০% পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
পরিশেষে বলতে পারি, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে (ICT) কেবল অর্থনীতি ও
উন্নয়নকে গতিশীল করেনি বরং বিশ্বকে করেছে আরও আন্তঃসংযুক্ত, সহযোগিতাপূর্ণ ও
তথ্যভিত্তিক।
উপসংহার
দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও প্রযুক্তি (ICT) মানব জীবনে অপরিহার্য অংশ হিসাবে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে মানুষের জীবন
সহজ হয়ে উঠেছে। অর্থনীতির দিক থেকে অধিক শক্তিশালী এবং সমাজকে আরও উন্নয়শীল
হিসাবে গড়ে তুলছে। যারা আজকের বিশ্বে (ICT) তে দক্ষতা অর্জন করবে, তারা অধিক এগিয়ে থাকবে এবং যারা (ICT) তে দক্ষতা অর্জন করতে পারবে না তারা অনেক পিছিয়ে থাকবে। তাই আমাদের এখনই সময় প্রযুক্তি
ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের ও সমাজ ব্যবস্থা কে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
তাই বলা যায়, আধুনিক যুগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ছাড়া দৈনন্দিন জীবন কল্পনা
করা মোটেই সম্ভব নয়।
রাফিকা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url